সেই সাত-সকালে যখন ঘর থেকে বের হয় রাজ তখন বৃষ্টির ঝাপটা আর দমকা হাওয়ায় উত্তাল ছিলো আকাশ। তবুও যেতে হবে কর্ম- ব্যস্ততার তাকিদে। দেরি হলে হয়ত দোকানের ক্ষতি হতে পারে। দোকানে আজ অনেক কাজ। কাষ্টমারদের সেই কাজের ডেলিভারী দিতে হবে। রুনা রাজের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী। ভার্চুয়াল যুগে আজকাল ছেলেমেয়েদের অনেক প্রেমিক-প্রেমিকা থাকে। কিন্তু বিয়ের আগে রাজের একমাত্র প্রেমিকা ছিলো রুনা। রাজ রুনাকে ভালোবেসে নাম দিয়েছিলো অনন্যা। তাছাড়া আজকে সেই অনন্যার জন্মদিন বলে কথা। একটি দামী গিফ্ট কিনতেই হবে। রাজ ঘর থেকে দ্রুত বের হওয়ার সময় তার স্ত্রী রুনা সন্ধেহের তীর ছুরে দিয়ে বললো ‘‘এই ঝড়-বৃষ্টির মাঝে সাত-সকালে দোকানে যাওয়ার মানেটা কি ? কোন সিডিউল দেওয়া আছে না, কি”। রাজ, রুনার কথায় কোন কর্ণপাত না করে বেরিয়ে পরে। সারাদিন ব্যপক কর্মব্যস্তাতার মধ্যে দিন অতিবাহিত করে ঠিক সন্ধ্যে ৭ টায় হিসাব করে দেখে রুনার জন্য যে গিফ্টটি কিনবে তার ৭৫% টাকা হয়েছে। এই মুহুর্তেও সম্ভব নয় বাসায় ফেরার। আরো ২৫% টাকা যোগার করতে হবে। তার অর্ধাঙ্গিনী প্রিয় মানুষটির মুখে একটু আনন্দের হাসি ফোটানোর জন্য তার এই চেষ্টা। রাজের ভালোবাসার মানুষটি মায়াবী চাহনী আর ফুটন্ত গোলাপের হাসির কথা মনে করতেই রাজ একটু নিজে নিজে হেসে নিলো। টাকার নেশায় সারাদিন খাওয়া- দাওয়ার কথাও ভুলে গেছে রাজ। চা-বিস্কুট খেয়ে দিন কাটিয়েছে। কিন্তু আজ চা-ওয়ালার সাথে প্রায় আধঘন্টা দাম কষাকষি করে ২ টাকা কম দিয়েছে। এটা অবশ্য রাজের নতুন কিছু নয়। প্রায় এই রকমই জীবন-যাপনই করতে হয় রাজের। কেননা রাজের স্ত্রী অত্যন্ত আল্লাদী ঘরের। কমপক্ষে সকাল ১১ টা পর্যন্ত ঘুমাবে। আবার দূপুরে ঘুমাবে, সন্ধ্যের আগমুহুর্তে ঘুম থেকে উঠবে। ঘুমাতে ঘুমাতে দিন শেষে ক্লান্ত হয়ে ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে গব গব করে এক বোতল পানি ঘিলে খাবে। আর অন্যদিকে সারাদিন কর্মব্যস্ততা পার করে ক্লান্ত হয়ে রাত ১১ টায় ঘরে ফেরে রাজ। ঘরে নতুন বউ রুনা। রাজ তবুও দূপুরে ঘরে ফেরে না । কেননা তার স্ত্রী রুনার ঘুমের সমস্যা হবে, সেই কারণে।
আজকে রাজের ভালোবাসার কাছে ইরানি কবি নিজামী, কাব্য লায়লি-মজনু ,কিংবা বিখ্যাত প্রেমিক জুটি ক্লিওপেট্টা এবং মার্ক অ্যান্টনির কে বা উইলিয়াম শেক্সপিয়র এর রচিত রোমিও-জুলিয়েট সহ পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসার গল্পগুলোক হার মানাবে। রাজ মনে মনে এমনটিই ভাবছেন । তাইতো রাজ আজ অল্প টাকায় কাজ ডেরিভারীর জন্য অনেক পরিশ্রম করছে। দামী গিফটি কেনার টাকাটা যখন যেগার হয়েছে তখন রাত ঠিক ১০ টা। রুনা খুব রাগান্বিত হয়ে বসে আছে। রাজ মনে মনে ভাবলে ‘দেরি হয়েছে তাতে কি। এত দামী একটি গিফট যদি তার হাতে তুলে দেওয়া হয় হয়ত তার রাগ থামবে।’ রাজ বাসার দিকে যাচ্ছে আর আকাশ পানে চেয়ে মৃদু মৃদু হাসছে । এই দামী গিফটি দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর ব্যপারটা নিয়ে অস্থির। এই দামী শাড়িটি যখন রুনা পরবে তখন বিখ্যাত ছবি ‘‘মোনালিসা’’ চেয়ে সুন্দর লাগবে আমার স্ত্রী রুনা মুচকি হাসি। ইস বিখ্যাত শিল্পী লেওনার্দে দা ভিঞ্চিকে যদি বেঁচে থাকতো তাহলে বলতাম আমার স্ত্রী, রুনা, একটি মুচকি হাসির ছবি আট করতে। কথাটা মনে করতেই আবার মৃদু মৃদু হাসছে রাজ। আজ একটি স্পেশাল ডে। তার ভালোবাসার স্ত্রী রুনার জন্মদিন । যাকে সে আদর করে ডাকে অনন্যা। রাজ রিকসাওয়ালা কে ডেকে বলছে ‘‘চাচাঁ আজকে দুই টাকা বাড়িয়ে দিবো একটু দ্রুত রিকসা চালান।” রিকস্ওয়াল রাজের দিকে তাকিয়ে একটু হেসে বলছে,‘‘ আজকে বৃষ্টির দিন দুই টাকা বাড়িয়ে দিলে চলবে না, ১০ টাকা বাড়িয়ে দিতে হবে।’’ রাজ কথাটা শুনে বললো ‘‘ ঠিক আছে, ঠিক আছে, ১০ টাকা বাড়িয়ে দিবো। কথাটা শুনেই রিকসাওয়ালা তার গতিবেগ বাড়িয়ে দিলো। দ্রুত গতিতে চললো রিকসা। দ্রুত চলতে গিয়েই রাস্তার মাঝখানে ভাঙ্গা ম্যেনহোল এ ভেতর যেয়ে পরে রিকসা । রাজ রিকসা থেকে লাফিয়ে রাস্তায় জমে থাকা ময়লা পানির মধ্যে যেয়ে পরে। রিকসার চাকাঁ পানচার আর রাজের প্রেষ্টিজ ও পানচার। তার আল্লাদী স্ত্রী, রুনার জন্য কিনে আনা গিফটটি সোজা ম্যেনহলের ভেতর পরে যায়। রুনা জন্য আনা বাহিরি ফুলগুলো ছিন্নভীন্ন হয়ে রাস্তায় জমে থাকা ময়লা পানিতে পরে থাকে। রাজ একটি বড় লাঠির সাহায্যে অবশেষে ময়লা কালো পানির ম্যেনহোল থেকে দামী গিফটি উদ্ধার করে। দামী গিফটির মধ্যে ময়লা পানির দূর্গন্ধ। রাজ একটি পারফিউমের দোকান থেকে সেই গিফটির কভার পরিবর্তন করে নেয় এবং সামান্য একটি পারফিউম মেখে নেয় । রাজ যখন বাসায় ফিরে তখন রাত ১১ টা । রুনা, রাজের হাতে গিফট দেখে মহা খুশি । রাজ তাকে গিফট দিয়ে সংবর্ধনা জানানোর আগেই রাজের হাত থেকে গিফটি কেরে নেয় তার স্ত্রী রুনা। যখন কেড়ে নয় ততক্ষনে পারফিউমের ঘ্রানটিও উধায়। ময়লা পানির দূর্ঘন্ধ বেরিয়ে আসে দামী গিফট থেকে। রুনা তড়িঘরি করে গিফটি খুলতেই দেখলো একটি খুব দামী শাড়ী কিন্তু তার ভেতর থেকে প্রস্রাব আর পায়খানার দুরর্গন্ধ বেরিয়ে আসছে। রুনা ভালো করে আবার তার ঘ্রানটা শুকে নিলো। বার বার সে একই ঘ্রান পাচ্ছে প্রস্রাব আর পায়খানার দুর্র্ঘন্ধ। রুনা এই্ দামী গিফটা ছুড়ে ফেলে দেয় রান্না ঘরের দিকে। দামী গিফট এর শাড়ীটা যেয়ে পরে মাংসের পাতিলের ভেতর । আজকে স্পেশাল রান্না করা ঝাল মাংস । শেষ পর্যন্ত মাংসটাও নষ্ট হলো । কিছুক্ষন পর সেই মাংসের পাতিল সহ, দামী গিফ্ট সহ সব কিছু ছুড়ে ফেলে দেয় রাস্তায় । রাগে দুঃখে রুনা রাজকে ইচ্ছেমতো বকাঝকা করছে। খুব গভীর রাত তাদের ঝগড়া তুমুল পর্যায়ে পৌঁছে যায়। ঝগড়ার একপর্যায়ে রাজকে সে ঘর থেকে বের করে দেয়। রাজ সোজা ভদ্রলোকের মতো রাস্তায় বের হয়ে হাটতে থাকে । কিছুক্ষন পর সেই রিক্সাওয়ালা এসে হাজির । স্যার কই যাইবেন । উঠেন আমার রিক্সায় । রাজ রিক্সাওয়ালার দিকে একবার ভালো করে তাকিয়ে বললো,‘‘ তুমি কি ভালো করে চোখে দেখো,।
রিক্সাওয়ালা দেখমু না কেন ? ঐ যে দেখেন তিন-চারটা কুকুর কিভাবে শাড়ীটাকে কামড়িয়ে কামড়িয়ে খাচ্ছে।
রাজ চেয়ে দেকে সেই দামী গিফট আর স্পেশাল ঝাল মাংসগুলো নিয়ে কাড়াকাড়ি করে খাচেছ কুকুরগুলো। শাড়ীটা পর্যন্ত রেখায় দিচ্ছে না কামড়িয়ে কামড়িয়ে খাচ্ছে।
রাজ রিকসাওয়ালা দিকে ভালো করে তাকিয়ে বলে,‘‘ হুম বুঝলাম । এবার আমারে নিয়ে দূরে কোন -ম্যানহোলের ভেতর ফালাইবা ।
রিকসাওয়ালা একটু লজ্জাপেয়ে বলে কি ক্যান স্যার ,‘‘ওটা ভুল হয়ে গেছে । আর ভুল হইবো না । চলেন কোথায় যাবেন । তবে এখন কিন্তু মাঝরাত। ভাড়া দ্বিগুন দিতে হবে।’’
রাজ চারিদিক তাকিয়ে দেখে আশেপাশে কোন রিকসা নেই। তার এই দ্বিগুন ভাড়ার রিকসায় যেতে হবে। রিকসায় উঠে রাজ বলছে , আমাকে আশেপাশের কোথাও থাকার ব্যবস্থা করতে পারবা ।
রিকসাওয়ালা জবাব দিলো ‘‘হ্যাঁ পারমু স্যার । পার্কের ভেতর বসার ভেঞ্চের মধ্যে সোজা হয়ে শুয়ে থাকবেন। কেউ আসলে কোন কথা বলবেন না।” রাজ বললো, ‘ঠিক আছে তাই কর।’
রাজের সম্মতি পেয়ে রিকসাওয়ালা বললো, ‘‘ আমি আপনারে পাহারা দিমু স্যার আপনি কোন চিন্তা করবেন না। বাহিরে দেখেন কি সুন্দর বাতাস আপনার চোখে আল্লার দুনিয়ার সব ঘুম চলে আসবে।”
রাজ তাই করলো। রিকসাওয়ালা তাকে পার্কের একটি জায়গায় নিয়ে আসলো। রাজের জায়গাটি খুবই পছন্দ হয়েছে, আকাশে চাদেঁর ধবল জোৎস্না আর ফুরফুরে বাতাসে রাজের মনটা চাঙ্গা হয়ে উঠে তাই সে রিকসাওয়ালাকে বললো,‘‘ধন্যবাদ, নাইস প্লেস,। রিকসাওয়ালা ধন্যবাদ গ্রহন করে তাকে বেঞ্চের উপর সোজা হয়ে শুয়ে ঘুমিয়ে যেতে বললো। একটা সমস্যা রাজের কোনভাবেই ঘুম আসছে না। খুব মসার যন্ত্রনা। কানের মাঝে মসার ভ্যাঁন ভ্যাঁন শব্দে রাজের ঘুম আসছে না । কিন্তু রাজ খুবই ক্লান্ত । পকেটেও পয়সা নেই। একটি হেটেলে সিট ভাড়া করে সে ঘুমাবে সেই পয়সা তার নেই। রাজ খুবই ক্লান্ত হঠাৎ ঘুমিয়ে পরে । গভীর ঘুমের কিছুক্ষনের মধ্যেই তার ঘুম ভেঙে যায় । দেখে কারা যেনো তাকে চিমটি দিচ্ছে। রাজ তড়িঘরি করে লাফিয়ে উঠে । দেখে কয়েকটি মেয়ে মানুষ তাকে দেখে হাসছে আর বলছে, ‘‘ কি রে ‘বলদা’ ঘুমিয়ে পরছিস নাকি । , . . . . . . করতে এসে ঘুমিয়ে পরেছিস। করবি না । শাড়ি উঠাবো করবি। মাত্র ৫০ টাকায় একবার করতে পারবি।’’
রাজ বুঝে উঠতে পারছে না এতরাতে এই পার্কে সেজেগুজে এই মেয়েগুলো আসলো কোথায় থেকে। নিশ্চয়ই কোন ভূত-পেত্মী হবে। রাজ দোয়া-কলমা পড়া শুরু করে দিলো । রাজের দোয়া-কলমা পরা দেখে অন্য একটি মেয়ে অট্টহাসি দিয়ে বলে ‘‘ কিরে করতে এসে ভয় পাইতাছছ, বুঝি, ভয়ের কোন কারন নাই, আমার কাছে ট্যাবলেট আছে দরকার হলে খাইয়া, ল, । রাজ এইসব আজগবি কথাশুনে আরো ভয় পেয়ে যায়। এবং পলানোর জন্য পথ খুঁজতে থাকে। যেই পলাতে যাবে মেয়েগুলো তাকে ঝাপটিয়ে ধরে ফেলে । রাজ ভয়ে হাউমাউ করে চিৎকার করে এবং ধস্তাধস্তি করতে থাকে তাদের খপ্পর থেকে মুক্তি হওয়ার জন্য। মেয়েগুলো তাকে শেষ পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে বলে ’’ হালাই মনে হয় হিজলা, লগে কিচ্ছু নাই। যা , ভাগ এখান থেকে ফহিন্নির পুত । রাজ একটু সুযোগ পেয়েই এক দৌড়ে পার্কের বাহিয়ে চলে আসে। তখন পার্কের বাহিরে সেই রিকসাওয়ালা বসে বসে চা-পান করছিলো । রাজ রিকসাওয়ালাকে ডাক দিয়ে বলতে থাকে ‘‘ তুমি আমাকে কোথায় নিয়ে এলে, পার্কের ভেতর ভূত-পেত্মী ভরা । তারাতারি চলো এখান থেকে পালাতে হবে।
রাজের কথাশুনে রিকসাওয়ালা আট্টহাসিতে হেসে উঠে। পাশে চা বিক্রেতা বলে উঠে,‘‘রাত-বিরাইতে যতসব পাগলের আনাগোনা।”
রিকসাওয়ালা রাজকে শান্তনা দিয়ে বলে ‘‘স্যার একটা ভালো জায়গা আছে, মাজারে চলেন, খাওযা থাকা একদম ফ্রি । সরারাত গান বাজনা শুনতে শুনতে আপনার খুব আনন্দ লাগবে।
রাজ খুব আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো কি গান ?
রিকসাওয়ালা : স্যার গাঁওগেরামের গান, আধ্যাতিক গান । মুর্শিদি গান ।
রাজ : কেন বাউল গান হবে নাকি ?
রিকসাওয়ালা । হ্যঁ স্যার বাউলরাইতো গান করে।
রাজ : ঠিক আছে চলে যাই । রাজ রিকসা চরে বসতেই, রিকসাওয়ালা বলে দিলো ‘‘স্যার এখন কিন্তু ভাড়া তিনগুন। এখন শেষ রাত। ভাড়া তিনগুন। রাজ বললো ‘‘ঠিক আছে সমস্যা নাই ।’’
এরমধ্যে হঠাৎ রাজের মাথায় বৃদ্ধি আটলো, ‘‘রিকসাওয়ালা যখন খুশি তেমন ভাড়া বৃদ্ধি করছে। একটা কিছু করা দরকার। যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের সচিবকে ফোন করা দরকার। রিকসায় ওঠলে শেষ রাতের ভাড়া কত হয় রেইটটা জানতে হবে। তারা রিকসার লাইসেন্স দিয়েছে যেহেতু, সেহেতু ভাড়াও নির্ধারন করে দিয়েছে। যেমন ভাবনা তেমন কাজ, যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে সচিব এর পিএস হ.ম.জ হাবিজাবি উদ্দিন ভুইয়া কে ফোন করে বলে, ‘‘ হ্যালো, সচিব সাহেবকে দেওয়া যাবে । না দিলোও চলবে আপনি কি বলতে পারেন, রিকসায় উঠলে শেষ রাতের ভাড়া কি তিনগুন হয়। হ্যালো , হ্যালো , ! অপর প্রান্তে যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে সচিব এর পিএস হ.ম.জ হাবিজাবি উদ্দিন ভুইয়া , পাগল-ছাগল বলে লাইনটা কেটে দিলো।
রিকসাওয়ালা গভীর মনোযোগ সহকারে রাজের কথাগুলো শুনে, মোবাইলে কথাশুনে বলে উঠে,‘‘ স্যার আপনি কি পুলিশের থানায় ফোন দিছেন”
রাজ : মাথা নেরে বললো, ‘‘না যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে ফোন দিয়েছি।’’
রিকসাওয়ালা তড়িঘড়ি করে রিকসা চালানো বন্ধ করে রাজের পায়ে ধরে বলতে থাকে ,‘ স্যার আমাকে মাফ করে দেন, আমি আর আপনার কাছ থেকে ভাড়া নিবো না। আপনার যেখানে খুশি যান। আমি আপনাকে নিয়ে যাবো । চলেন।
রাজ, রিকসাওয়ালার কাকুতি-মিনতি দেখে বলে,‘‘ ঠিক আছে, ঠিক আছে, আপাতত আমাকে মাজারে নিয়ে যাও । আমার খুব খিদে পেয়েছে । তুমি বলেছো মাজারে ফ্রি খিচুরি খাওয়া যায়। চলে তাড়াতাড়ি চলো। ফ্রি খিচুরি খাবো আর বাউল গান শুনবো।”
রিকসাওয়ালা প্রায় ১৫ মিনিটে পৌছে যায় মাজারে । সমস্ত মাজার জুরে চলছে রমরমা আড্ডা আর লাল কাপড়ে বোষ্টিত আগরবাতি মোমবাতি। এ-যেনো সেই বিখ্যাত উপন্যাস লাল সালু কথা মনে পরে গেলে । সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ-এই উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র মজিদ এর বিকল্প অনেক পাগলা বাবারা এখানে আছেন। জায়গায়, জায়গায় পাটি বিছিয়ে বসে আছে এক -একটি গ্রুপ। প্রতি গ্রুপে এক-একটি পাগলা বাবা রয়েছে । পাগলা বাবার মেলা । মাজারে প্রত্যেক আসরে আগরবাতি আর মোমাবাতি জ্বলছে । ব্যাপকভাবে নাচ-গান হচ্ছে। রিকসওয়ালা রাজকে ধরে একজন পাগলা বাবার কাছে বসালো আর বললো, ‘‘মাথা নাড়িয়ে জিকির করুন আর বলুন ‘পাগলা, পাগলা, ‘হোক মাওলা’ । নিজের শরীর টা একটু ঝাকিয়ে নিবেন।”
রাজ বললো, ‘‘ আমি এগুলো পারি না।” রিকসওয়ালা বললো, ‘‘ এগুলো না করলো, সিন্নি আসবে না, সিন্নি মানে খিচুরি আসবে না। বুঝলেন । আমি আপনার পেছন থেকে ধাক্কাদিচ্ছি আপনি শুধু ‘হোক মাওলা’ আর ‘পাগলা বাবা’ বলে চালিয়ে যান। রিকসাওয়ালা রাজের পিঠে জোড়ে থাক্কা দেয়, রাজের শরীর কেপেঁ উঠে, তখন রাজ , পাগলা বাবা, হোক মাওলা বলে চিৎকার দেয়। এর মধ্যে একজন এসে একটি কলকি ধরিয়ে বললো ,,‘‘সাধুবাবার সন্ধান পেতে এটা খেতে হবে, দেন তারাতারি টান দেন। প্রতিটি ধোওয়ার সাথে রয়েছে পাগলা বাবার সাধনা।
রাজ কোন কুল কিনারা না দেখে গাজার কলকিতে টান দিতে থাকে। প্রথম টানে খু ,খু, করে কাঁশি দিতে থাকে । রাজের এই আনারি আচরন দেখে রিকসাওয়ালা বলে, ‘স্যার একটু আস্তে আস্তে টান দেন ভালো লাগবে।’’ রিকসাওয়ালা কলকিতে কয়েকটি টান দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
রাজ মনে মনে ভাবলে রিকসাওয়ালা পারলে আমিও পারবো। সে এবার ভালো করে গাঁজার কলকিতে টানতে শুরু করলো আর খাজা বাবার সাধনায় মাথা নাঁিড়য়ে নাড়িঁয়ে গাজাঁ খেতে লাগলো।
একটু পরে রাজ টের পেলে তার মাথা ভীষন রকম ঘুরছে। বমি বমি ভাব হচ্ছে। কোন ভাবেই সে সহ্য করতে না পেরে তরিঘরি করে পাগলা বাবার গায়ের উপর বমি করে দেয়।
রাাগে দু:খে পাগলা বাবা তার খাদেমকে আদেশ করে তাকে পুকুরের পানিতে চুবিয়ে আনার জন্য। রিকসাওয়ালা সেখান থেকে চম্পট । পাগলা বাবার খাদেমরা রাজকে ধরে পুকুরে নিয়ে পুকুরের পানিতে ইচ্ছেমতো চুবানি দিতে থাকে। রাজ কোন কিছুই বুঝতে পারছে তাকে চুলের মুঠি ধরে পানিতে চুবানি দিচ্ছে কেন । সাতবার চুবানি দেওয়ার পর তাকে পুনরায় পাগলাবাবার কাছে নিয়ে আসে। পাগলা বাবা তার হাতের লাল গামছা দিয়ে মুছে তার কাছে বসায়। রাজ পুকুরের পানি চুবনি খেয়ে ক্লান্ত, তাই ঘুমিয়ে পরে পাগলা বাবার পায়ের কাছে। তখন ভোর কেটে গিয়ে সকালের সূর্য্য উঠেছে। রাজ মাজারে এককোনে পাটিতে পরে আছে । তার হাতের টাকা-পয়সা মোবাইল, এমনকি শরীরের জামাকাপড় কোনটাই নাই । ভাগ্য ভালো রাজের শর্টপ্যান্টটা তারা খুলে নেই নাই। তাছাড়া সবকিছু খুলে নিয়েছে।
রাজ কোন রকম উঠে দাঁড়ায় । চারিপাশ তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। রাতের জমজমাট মাজার সকাল হলেই নিরব । অনেকেই কুকুর বেড়ালে মতো এদিক সেদিক ঘুমিয়ে আছে। রাজ তড়িঘরি করে মাজারের বাহিরে আসে। এসে দেখে । রিকসাওয়ালা রিকসার ভেতর ঘুমাচ্ছে। রাজ জোরে জোরে চিৎকার করে রিকসাওয়ালার ঘুম ভাঙিয়ে বলে তাড়াতাড়ি চলো বাসায় যাবো। ,,
রিকসাওয়ালা ভালো করে তাকিয়ে দেখে রাজের গায়ে কোন জামাকাপড় নেই শুধু শটপ্যন্ট পড়া । স্যার আপনার জামাকাপড় কোথায় ?
রাজ : সব ওরা নিয়ে গেছে । তারাতাড়ি চলো । লোকে দেখলে লজ্জা দিবে। তাড়াতাড়ি চলো।
রিকসাওলা বলে ওঠে বলেন কি স্যার , তাড়াতাড়ি থানায় চলেন, ‘‘পাগলা বাবাদের নামে মামালা দিতে হবে।’’
রিকসাওয়ালার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রাজ বলে, ‘‘ তুমি ঠিক বলেছো ? থানায় কাজ হবে না আমি স্ররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পি এস আ.হম কুদুবুদ্দিন হিস্যাকে - কে ফোন করছি । সেই এই পাগলা বাবাদের বিরুদ্ধে এ্যকসন নিতে পারবে।
যেই কথা তেমন কাজ। রাজ রিকসাওয়ালার কাছে থেকে মোবাইল নিয়ে সরাসরি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের পিএস আ.হম কুদুবুদ্দিন হিস্যাকে কে ফোন করে বলে ,‘ পাগালা বাবার দল আমার মোবাইল, টাকা পয়সা সব নিয়েছে এমনকি আমার পরিহত জামাকাপড় খুলো নিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে এ্যকসেন নিন। :””
অপর প্রান্তে স্ররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর পি এস আ.হম কুদুবুদ্দিন হিস্যা বলে উঠে,‘‘ এত সাত-সকালে কোন হাগলেরে আবার হাগলা কুত্তায় কামঁড়িয়েছে।” বলেই ফোনটা রেখে দিলো ।
রাজ কোন মন খারাপ না করে । রিকসাওয়ালাকে শান্তনা দিয়ে বলে আমাকে আগে বাসায় পৌঁছে দাও। তারপর প্রয়োজনে ধর্মমন্ত্রনালয়ে ফোন করে বলবো মাজারের মধ্যে এই সব পাগলা বাবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে।
পাগলাবাবা ভক্ত রিকসাওয়ালা বুঝে যায় স্যার আবোল-তাবল বকছে , মানে আর্ধেক পাগল হয়েছে। তাকে তাড়াতাড়ি বাসায় পৌঁছে দেই । নয়ত বিপদে পরতে হবে।
রাজকে দ্রুত বাসায় পৌঁছে দিয়ে রিকসাওয়ালা চলে যায় তার নিজ গন্তব্যে।
স্বামীকে রাতে বের করে দিয়ে রাজের বউ রুনার কোন মাথা-ব্যথা নেই । দিব্যি সুখের ঘুম দিয়েছে রুনা। রুনা সুখের ঘুম ১১টার আগে ভাঙ্গে না। কিন্তু এই সকালে সে ঘরের দরজা খুলে বসে আছে । কার সাথে যেনো মোবাইলে ফিস ফিস করে আলাপ করছে আর অট্টহাসিতে মেতে উঠছে। রাজকে দেখেই সেই অট্টহাসি থামিয়ে দিয়ে আল্লাদি সুরে বলে,‘‘ রাজ তুমি এসেছো। সারারাত কেথায় ছিলে ? আমি বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছি বলে তুমি চলে যাবে, এটা কি ঠিক। কিছুক্ষন পর হাতের তুরি মেরে রাজের দিকে তাকিয়ে বলে ‘‘ ঝটপট রেডি হয়ে নাও।
রাজ হতভম্ব হয়ে বলে ‘‘রেডি হবো কেন ? কোথায় যাবে ? ”
রুনা : কেন আমার বাপের বাড়িতে ? আমার বাপের বাড়িতে আজ তোমার স্পেশাল দাওয়াত
রাজ : কেন ?
রুনা : তুমি জানো না । জার্মান থেকে কিছুক্ষন পরেই আমার দুলাভাই আসবে। প্রতি বছরে একবার দুলাভাই আসে সেই সূদুর জার্মান থেকে।
রাজ তার রুনার দিকে তাকিয়ে দেখে, রুনা খুশিতে আটখানা। তার বোন ও বোনের জামাই আসবে সে জার্মান থেকে । একমাত্র বড় বোন । রাজ খুব মায়াবি দৃষ্টিতে রুনা দিকে তাকিয়ে বলে,‘‘ তোমার বোনও আসবে তাই না ।
রুনা : আরে না, বোন কখনও আসে না । সে জার্মানে থাকে । দুলাভাই প্রতিবছর একবার করে বেড়াঁতে আসে। সে আসার পর আমি তার সেবা-আদর-যত্ন সব করি। সে মাঝে মাঝে বলে আমি তার বউয়ের চেয়ে বেশি আদর যত্ন করি। জামার্নে যে থাকে সে তার বড় বউ । এখানে আমি তার ছোট বউ। আমাকে নিয়ে টই টই করে পুরো শহর ঘুরে বেড়ায়। জানো আমাকে খুবই আদর করে। ছোট বোনের মতো।
রাজ মাথা নেড়ে সায় দেয়, হুম খুব ভালো। ছোট বউ ও ছোট বোন সবই বানিয়ে ফেলেছে। তাহলে ঝটপট আমি রেডি হয়ে নেই । রাজ দেখলো এরই মধ্যে আবারও ফোন । এই ফোনটি তার দুলাভাই করেছে। ফোনে দুইজনই খুবই নেকেট, নেকেট কথা বলছে। রাজ প্রতিবাদ জানিয়ে বললো,‘‘ তুমি কার সাথে এত বাজে বাজে কথা বলছো, কথাগুলো খুব নেেকট নেকট, সেক্সি সেক্সি কথা বলছো ।
প্রতিউত্তরে রুনা বলে ‘‘আরো দুত্তরী ওটা আমার দুলাভাই। দুলাভাইয়ের সাথে সবকিছুই করা যায়। সে ফোন করেছে তার সাথে আমি খুবই ফ্রি এবং খোলামেলা।’’
রাজ মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলে, ‘‘তাই নাকি । তোমার দুলাভাই তোমাকে ছোট বোনের মতো দেখে । ছোটবোনদের সাথে কি নেকেট নেকেট কথা বলা যায়।
রুনা : দুত্তরী তুমি কি বলছো । সে মস্তবড় মাওলানা সাহেব। নোয়াখালী অঞ্চলের খুব নামকরা মাওলানা ছিলেন। তাছাড়া সে জামার্নের . . . .. ইসলামী সংগঠনের নেতা। প্রচুর ফান্ড মানে টাকা পায়। ঢাকা তে সে কয়েকটি ফ্লাট ও বাড়ী কিনেছে।
রাজ বলে উঠে ,‘‘ জামার্নে কি সে মাওলানাগিরী করে , জার্মানে কি জায়গায়, জায়গায়, ওয়াজ মাহফিলের ব্যবস্থা আছে। তাছাড়া মাওলানাদের তাজা বড় মাথাওয়ালা মাছ লাগে। বড় মাথাওয়ালা মাছ ছাড়া তারা ভাত খেতে পারে না।
রাজের কথা শুনে রুনা আবার বিরুক্ত হয়ে বলে ‘‘আরে দুত্তরী ! না । সে জার্মানে একটি নাইট ক্লাবে চাকুরী করে। ৯৯.৮ রকম মদ সে বানাতে পারে । তার বেতন প্রচুর ।
রাজ কৌতুহল নিয়ে বলে, ‘‘ নাইট ক্লাব মানে সেখানে তো মেয়েরা আন্ডারপ্যান্ট আর ব্রা পরে কি সব ডান্স দেয় । ডিসকভারী চ্যানেলে দেখিয়েছে।
কথাগুলো বলতে না বলতেই এতক্ষনে রুনার চোখ পরলো রাজের পরনো শুধুমাত্র শটপ্যান্ট ছাড়া আর কিছুই নেই। রাজের এই অবস্থা দেখে রুনা আবারও ক্ষেপে যেয়ে বলে,‘‘গায়ের জামাকাপড় কি করেছো ?
রাজ গভীর দুঃখের সাথে বলতে থাকে, ‘‘ পাগলা বাবারা সব চুরি করে নিয়ে গেছে ।
রাজের কথাশুনে রুনা, তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠে বলে ,‘‘ নিজের জামাকাপড় মানুষে খুলে নিয়ে যায়। সেটাও পর্যন্ত খেয়াল করতে পারে না। তাড়াতাড়ি কাপড়-চোপর পরে রেডি হয়ে নাও বাবার বাড়িতে যেতে হবে। দুলাভাই বার বার ফোন করছে। শত হলেও আমি ওর একমাত্র শালিকা। আমাকে না দেখতে পেয়ে না জানি বেচারা কত কষ্ট পাচ্ছে। তাড়াতাড়ি চলো। রাজ মাথা নেড়ে সায় দিয়ে বলে ‘‘তুমি ঠিকই বলেছো, তাড়াতাড়ি চলো, দেরি হয়ে যাচ্ছে। বলেই তড়িঘরি করে জামাকাপড় পরে রাজ। তখন সকাল গড়িয়ে প্রায় দূপুরের দিকে ।
রাজ ও রুনা তরিঘরি করে ঘর থেকে বের হয়ে দেখতে পেলে আবারও সেই রিকসাওয়ালা।
রিকসাওয়ালা দেখামাত্রই বলে উঠে: ‘‘ স্যার আসেন আমার রিক্সায় । কই যাইবেন ?
রাজ : আমি শুশুরবাড়ী যামু , আপানি যাইবেন ।
রিকসাওয়ালা একটু লজ্জা পেয়ে বলে, ‘‘ কি ক্যান স্যার আমার শুশুরবাড়ি হইতাছে বরিশাল । আপনার শুশুরবাড়ি কোথায় ?
রাজ : আমার শুশুবাড়ি ইসিমপুর। এখান থেকে ৬০০ গজ মাত্র। ১৫ মিনিট লাগবে মাত্র । যাইবা নাকি বলো ?
রিকসাওয়ালা বলে ‘‘কি ক্যান স্যার যামু , তয় এখন তো ম্যাডাম আছে সাথে । রিকসাভাড়া একটু বারতি দেওয়া লাগবো।
রাজ : বাড়তি ভাড়া দিমু ক্যান।
রিকসাওয়ালা : স্যার ম্যাডাম আছে না । ওনার একটা সম্মান আছে না । আমি খুবই কেয়ারফুল ভাবে রিকসা চালামু, বুঝলেন স্যার ।
রাজ : ঠিক আছে! ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি চলো।
রাজ ও রুনা দুইজনই ঠিক ৩ টায় রাজের শুশুরবাড়িতে পৌঁছালো । তখন দূপুরের হেব্যি খানাপিনা হচ্ছিলো। রাজের পেটে খুবই খুদা ছিলো তাই সে তড়িঘরি করে খাবারের টেবিলে বসে পরে । ওদিকে রাজের স্ত্রী রুনা তার দুলাভাইকে পেয়ে প্রথমে লম্বা একটা সালাম দিলো পরেক্ষনে একটু জড়িয়ে ধরে সংবর্ধনা দিলো দুলাভাইকে। একমাত্র শালিকা বলে কথা। দুলাভাই শালিকাকে নিয়ে খাবারের টেবিলে বসে পরে। মাওলানা সাহেবের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি । মনে হয় বাংলাদেশে আসার পুর্ব মুহুর্তে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি রেখেছে। রাজ জীবনে এই প্রথম খোচা খোচাঁ দাড়িঁওয়ালা মাওলানা দেখলো।
সবাই একসাথে খাবার শেষ করে। তখন বিকেল । রাজের বাড়ি ও তার শশুরবাড়ি এবং দোকান ছিলো খুবই কাছাকাছি। তাই রাজ কোন সময় নষ্ট না করে দোকানে চলে যায়। যাওয়ার সময় রাজের স্ত্রী রুনাকে বলে সে রাতে তাড়াতাড়ি ফিরবে এখান থেকে রুনাকে নিয়ে যাবে। রাজ চলে যায়। রাজ যথাসময়ে দোকানের কাজকর্ম শেষ করে রাত্রী প্রায় ১১ টায় শুশুরবাড়িতে পৌঁছায় । সোখানে খাওয়াদাওয়া শেষ করে রুনাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তত হলো। রুনা বাসায় যেতে রাজি হলো না। রাজের শশুর মারা গিয়েছিলো রাজের বিয়ের আগেই। রয়েছে শুধুমাত্র শাশুরি । শাশুরির অনুরোধে রাজ সেদিন শশুর বাড়িতে থেকে যায়। রাজ যে রুমটিতে থাকবে সেই রুমটি দেখিয়ে দেয় তার শাশুড়ি। রাজ সেই রুমটিতে গিয়ে ক্লান্ত অবসান্য মনে খানিকটা ঘুমিয়ে পরে। এরমধ্যে রুণা এসে রাজের গায়ের উপর একটি কাঁথা জড়িয়ে দিয়ে বলে,‘‘ রাজ তুমি ঘুমিয়ে যাও, আসছি, বলেই রুনা চলে যায় তার দুলাভাইয়ের ঘরে। দুলাভাইকে মশারি ও বিছানা ঠিকঠাক করে দিয়ে ঘরের লাইট বন্ধ করে দিয়ে চলে আসে রাজের কাছে। রুনা ও রাজ একসাথে ঘুমিয়ে পরে । রাজ গভীর ঘুমে ব্যস্ত। তখন মাঝরাত পেরিয়ে ভোরের দিকে। আসমান জুরে লালিমার আভা । কিছুক্ষন পরেই আযানে সুর ভেসে আসে। রাজ ঘুমের ঘোরে রুনার উপর হাত রাখতেই। তার হাতটি ক্রমাগত বিছানায় পরে যাচ্ছে। রাজ চোখ মেলে। তার পাশে রুনা নেই। এদিক-সেদিক তাকিয়ে রুনাকে খুঁেজ পেলো না। তরিঘরি করে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে রুনাকে খুজঁতে থাকে। নেই ! ঘর থেকে বেরিয়ে ড্রইং রুমে খুঁেজ। সেখানেও নেই । বাথরুমেও নেই । কোথায় তাহলো । রুনার দুলাভাইয়ের রুমের বাতিটাও নিভানো । তাহলে কোথায় ? রাজ খানিক ভীত ও আতংকিত। চুপটি করে রাজ ভাবছে তাহলো রুনা কোথায় গেলো এত রাতে। ড্রইংরুমে বসে ভাবছে কোথায় ? একটু পরে খানিক উহ, আহ্, শব্দ ভেসে এলো রাজের কানে। ধস্তাধস্তির শব্দও ভেসে এলো। রাজ খানিক বুঝে নিলো এটা রুনার কন্ঠ। রাজ ড্রইং রুম থেকে রুনার দুলাভাইয়ের রুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো যে রুনার দুলাভাইয়ের রুমে ধপ করে লাইট জ্বলে উঠেছে । রাজ কৌতুহল নিয়ে খানিকটা নিশব্দে দৌড়ে গেলে। দরজার ফাঁকে চুপটি করে তাকিয়ে নিরবে সহ্যকরে দেখতে হলে সেই দৃশ্য। দৃশ্যটা দুই জনের। রুনা ও তার দুলাভাই। সেই ঘর থেকে রুনা তার শাড়ী পড়ার চেষ্টা করছে । কিন্তু রুনার দুলা ভাই কোনভাবেই সেই শাড়ী পড়তে দিচ্ছে না। চুপ, চুপ, বলছে, আরো একবার । আরো একবার প্লিজ। আরো একবার দাও প্লিজ । শাড়ীটা আবার টান দিয়ে খুলে ফেলার চেষ্টা করছে, আর রুনা বলছে সকাল হয়ে যাচ্ছে সবাই উঠে পরবে আর না আর না । অনেক হয়েছে আবার আগামীকাল। দেখে মনে হলো হুলের বিড়াল শিকারি ইদুর ধরেছে। রুনার দুলাভাই মাওনালা সাহেব আর রুনার এই দৃশ্য দেখে রাজ এক দৌড়ে নিজের ঘরে যায়। যেয়ে তার নিজের জামা নিজে টেনে ছিরে ফেলে। নিজের হাতে কামড় বাসিয়ে চাপাকান্নায় ভেঙ্গে পরে রাজ। এ কি দেখলো রাজ তার ভালোবাসার রুনা যার ভালোবেসে যার নাম দিয়েছিলো অনন্যা। যাকে সে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলো । তার চরিত্র এই রকম । নোয়াখালি জেলার বিখ্যাত মাওলানা অ.বি.সি কুরকুর আলী সাহেবের চরিত্র এই রকম । রাজ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না । তড়িং গতিতে সে সিদ্ধান্ত নেয় সে আত্মহত্যা করবে। নিজের জামা ছিরে ফ্যানের সাথে বেধেঁ নিলো । গলায় ফার্স পরিয়ে ঝুলে থাকবার জন্য চেয়ারটা পায়ের কাছে নিয়ে নিলো। গলায় ফাঁসপরিয়ে কিছুক্ষন পরেই চেয়ারটা পা দিয়ে লাথ্যি মেরে সরিয়ে দেয়। কিন্তু ফাঁস দেওয়া তার হলো না । রাজের জমাটা ছিলো খুবই পাতলা । তাই রাজের ভার বইতে না পেরে জামাটাও ছিড়ে যায়। রাজের জামাটাও রাজের সাথে প্রতারণা করেছে। রাজ ধপ করে খাটের উপর পরে যায়। তার ফাঁসি দিয়ে আর মৃত্যু হলো না। এরই মধ্যে রুনা দৌড়ে আসে রাজের ঘরে। বলতে থাকে, কি হয়েছে ! কি হয়েছে ! এসে দেখে রাজ খাটের উপর নিদারুন অসহায় ভাবে পরে আছে। দেয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়ে রাজের মাথা ফেটে রক্তাক্ত। গলায় ছেড়্যা জামা প্যাঁচানো। এক টুকরো জামার অংশ ফ্যানের সাথে লেগে আছে। রাজ এর দু‘চোখে শুধুই পানি । মুখে কোন সারা শব্দ নেই । শুধুই চেয়ে থাকা । একদৃষ্টিতে শুধুই চেয়া থাকা ছাড়া রাজ ততক্ষনে নিজের বোধশক্তি সব হারিয়েছে। চিকিৎসা নেওয়ার পর রাজ শাররীক সুস্থ হলেও তার মানসিক বোধশক্তি হরিয়ে ফেলেছে চিরতরে। . . .. . . . . . .. . . . . .